দুই তীরকে সংযুক্ত করে সেতু। নদী অথবা খালপারের মানুষের প্রত্যাহিক চলাচলের ক্ষেত্রে সেতু খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নদী পারাপারের ক্ষেত্রে নৌকা বা যান্ত্রিক নৌ-যানের বিকল্প হল সেতু। তবে বিশ্বে এমন সব অত্যাশ্চর্য সেতু রয়েছে যা আপনাকে অবাক করার পাশাপাশি কৌতূহলীও করে তুলবে। আপনি অবশ্যই ভাববেন ‘কিভাবে তৈরি করা হলো সেতুটি?’ সত্যিই তাই, পৃথিবীতে অনেক বৈচিত্র্যময় সেতু রয়েছে যা আমাদের কল্পণার বাইরে। চলুন জেনে নেয়া যাক এমনই অদ্ভুদ ৮টি সেতু সম্পর্কে-
১ গোল্ডেন ব্রিজ
ভিয়েতনামের এ সেতুকে অভিনব সেতু বলছেন অনেকেই। সম্প্রতি সংস্কার করে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে সোনালি রঙের সেতুটিকে। আর এতেই সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত সেতু হিসেবে এটি প্রচার পেয়েছে। কোনো গাড়ি চলাচল করে না সেতুটিতে। শুধুমাত্র স্টেশনে ওঠার জন্য পথচারীরা দারুণ সুন্দর সেতুটি ব্যবহার করেন।এ পর্যটন এলাকাটি মোটেই নতুন নয়, ১৯১৯ সালে তৈরি। সে সময় ফরাসি ঔপনিবেশ ছিল ভিয়েতনাম। বর্তমানে সেই পুরনো সময়ের রূপটিই যেন নতুন করে নিয়ে আসা হয়েছে এ এলাকায়।
সোনালি রঙের হওয়ায় সেতুটি ‘গোল্ডেন ব্রিজ’ নামে পরিচিত। সারা বিশ্ব থেকেই পর্যটকরা আসেন ভিয়েতনামে। তাদের অনেকেই সেতুটিকে দেখতে যাচ্ছেন। অবাক হচ্ছেন এর নির্মাণশৈলি দেখে। হিল স্টেশন হিসেবে পাহাড়ের উপরে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি তৈরি করা হয়।বিশাল দুটি পাথুরে রঙের হাতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। আর এ কারণে ‘হ্যান্ড অফ গড’ বলছেন অনেকেই। ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে কংক্রিটের প্রকাণ্ড দুটি হাত। দুই হাত ধরে রেখেছে সোনালি রঙের সেতু,
নতুনভাবে সংস্কারের পর গত জুন মাসে ডানাং এর কাছে এই সেতুটি খুলে দেওয়া হয়।
ফরাসি উপনিবেশের স্মৃতি হিসেবে বর্তমানে এলাকাটিবে সেই উপনিবেশের রেপ্লিকা হিসেবেই গড়ে তোলা হয়েছে। ফরাসি স্টাইলের দুর্গ, ক্যাথিড্রাল, বাগান সবটা মিলে অসম্ভব নান্দনিক হয়ে উঠেছে এই অঞ্চলটি।
২ রমেক ডে বার্গ অফ ওয়াটার ব্রিজনদীর উপরে ব্রিজ। তবে ব্রিজটি শুধুমাত্র নৌযান চলাচলের জন্য। অবাক হচ্ছেন? হতেই হবে। কারণ এটি ওয়াটার ব্রিজ। জার্মানিতে রয়েছে এমনই একটি ব্রিজ যা এক নদী থেকে অন্য আরেকটি নদী পারাপারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। জার্মানির এলবি নদীর উপর অবস্থিত এই ব্রিজটি এদেশের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ শিপিং ক্যানেলকে সংযুক্ত করেছে। ৯১৮ মিটার লম্বা এই ব্রিজটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন ইউরো। ১৯৯৭সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০০৩ সালে। অর্থাৎ ব্রিজটি তৈরি করতে ৬ বছর সময় লেগেছে।
৩ কাঁচের ব্রিজলম্বায় ৩৮০ মিটার ও চওড়ায় ৬
মিটার। পাহাড়ের খাদেঁ কাঁচের ব্রিজ তৈরি করে রীতিমতো তাঁক লাগিয়ে দিয়েছে চীন। এটি
চীনের জাকিয়াংজি ন্যাশনাল পার্ক-এর উপর তৈরি করা হয়েছে। ব্রিজের নিচে রয়েছে
প্রায় ৩০০ মিটার গভীর খাঁদ। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু কাঁচের ব্রিজ এটি।
পর্যটকদের কাছে এই ব্রিজটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। তবে দূর্বল চিত্তের অধিকারী কেউ
এই ব্রিজে উঠলে ভয় পেতে বাধ্য! কারণ ব্রিজের নিচে রয়েছে গভীর অরণ্যে ঘেরা খাঁদ।
ব্রিজে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ নীচের দিকে তাকালে মনে হতে পারে পায়ের নিচ থেকে পৃথিবীটা
বুঝি সরে যাচ্ছে। কাঁচের এই ব্রিজটির দুই দিকে স্টিলের ব্রিম দিয়ে ঘিরে দেয়া
হয়েছে। ব্রিজটি তৈরিতে শক্তপোক্ত গ্লাসের কাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া একটু
পরপরই রয়েছে সাসপেন্স ক্যাবল। গ্লাসের পিসটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, বৃষ্টির
দিনে দূর থেকে এটিকে অদৃশ্য মনে হবে।
৪ দ্য ইসি মাহসি ব্রিজ
জাপানে অবস্থিত এই সেতুটি ৪৪ মিটার উঁচু। মূলত এটি একটি
রোলার কোস্টার সেতু। আর এই সেতুটিই হল জাপানিদের নিত্য নৈমিত্তিক চলাচলের পথ।
সেতুটি জাপানের দুটি শহর মাতুসি ও সাকাইমিনাতুস্কে সংযুক্ত করেছে। সেতুটি
ব্যবহারের আগে অবশ্যই গাড়ির ব্রেক পরীক্ষা করে নিতে হবে।
৫ লাংকা উইস্কাই ব্রিজ
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত এই সেতুটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৩০০
ফুট উঁচুতে। এই সেতুতে ২৫মিটার লম্বা বাঁকানো ফুটপাত রয়েছে। যা আপনাকে এক অপরুপ
সৌন্দর্য্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবে। সেতুটি দেশটির এক অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র
হিসেবে
৬ রোলিং ব্রিজ
এর অবস্থান লন্ডনে। চলনশীল এই সেতুটিতে ৬৮টি চেম্বার
রয়েছে! গ্র্যান্ড ইউনিয়ন খালের উপর অবস্থিত এই সেতুটি নৌকা পার হওয়ার সময় ঘুরতে
থাকে। আবার নৌকা চলে গেলে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা হয়।
৭ ড্রাগন
কিং-কং ব্রিজ
এর অবস্থান চীনে। চীনের
চামসাস্কিলে অবস্থিত। এই সেতুটি লম্বায় ১৮৫ কিলোমিটার। উচ্চতায় ২২ মিটার। সেতুটি
নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মোবিয়াসসুয়িং। এই সেতু দিয়ে উঠলে ড্রাগন কিং লেক ও মিস্কি
লেকের অপরুপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।
৮ দ্যা
হেলিক্স ব্রিজ
এটি সিঙ্গাপুরে অবস্থিত।
সিঙ্গাপুরের হেলিক্স ব্রিজটি পথচারীদের জন্য নির্মিত বিশ্বের প্রথম ডাবল হেলিক্স
ব্রিজ। এই সেতুটি ডিএনএর গঠন অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে। শহরের অপরুপ দিগন্ত দেখার
জন্য সেতুটিতে আছে মনোরম কিছু পয়েন্ট। এই সেতুটিতে দাড়ালে সমগ্র সিঙ্গাপুর সিটি
দেখা যাবে!
Leave a Comment