বিশ্বের অদ্ভুত কিছু মানুষ খেঁকো উদ্ভিদ
উদ্ভিদ প্রকৃতির এক বিস্ময়কর
উপাদান। পৃথিবীতে মনুষ্য জাতির টিকে থাকার জন্য গাছের কোন বিকল্প নেই। প্রাত্যহিক জীবনে
আমরা যে উদ্ভিদগুলো দেখতে পাই তার মধ্যে এমন কিছু উদ্ভিদ রয়েছে যারা বৈশিষ্ট্যের দিক
থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র। যাদের প্রতি বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
আমাদের পৃথিবীতে প্রায় ২,৯৮,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এতোগুলো প্রজাতির মধ্যে কিছু
গাছ সুন্দর ও সুগন্ধী ফুল উৎপন্ন করে, কিছু গাছ মাজাদার পুষ্টি-সমৃদ্ধ ফল উৎপন্ন করে,
কিছু গাছে আছে ঔষধি গুনাবলী এবং আবার এদের মধ্যে কিছু কিছু উদ্ভিদের রয়েছে পুরোপুরি
অদ্ভুত চেহারা ও বৈশিষ্ট্য।
চলুন বিশ্বের এরকম কিছু অদ্ভুত উদ্ভিদ সম্পর্কে জানা যাক।
1. পাইন ট্রি
পাইন ট্রি পোল্যান্ডের গ্রাফাইনো জঙ্গলে এমনও কিছু
গাছ আছে যে তার অদ্ভুত আকৃতির জন্য প্রসিদ্ধ। ১৯৩০ সালে পাইন গাছগুলিকে এই জঙ্গলে বসানো
হয়েছিলো। পাইন ট্রি গাছের শিকড় ৩০মাইল পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এই গাছের বাঁকা চেয়ারের
মত আকৃতি মানুষের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু কেন এই আকৃতি গাছ গুলিকে দেওয়া
হয়েছে তা আজও রহস্য। সেই কারণে এই জঙ্গলটি বিশ্বে রহস্যময় জঙ্গল হিসাবে প্রসিদ্ধ।
2. পিচার প্লান্ট বা কলস উদ্ভিদ
কলসের মতো দেখতে অদ্ভুত উদ্ভিদটি
আসলে মাংসাশী উদ্ভিদ । মানুষ খেঁকো না হলেও এটি ছোট ছোট পোকা-মাকড় ও কীটপতঙ্গ শিকার
করে। কলস উদ্ভিদের কলসের মুখটা লাল রংয়ের ফুলের মতো দেখায় বলে সহজেই পোকামাকড় আকৃষ্ট
হয়। তাছাড়া এটির মুখে মধু উৎপন্ন হয় আর এই মধুর লোভে কীটপতঙ্গ এসে ভিড় করে কলসের
মাথায়। বিশেষ তরল দিয়ে ভরা গভীর গহ্বর শিকার ধরতে সাহায্য করে। পৃথিবীতে মোট ৮০ প্রজাতির
কলস উদ্ভিদ আছে।
3. ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ
ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ বা বুনো
কীটকল একধরণের পতঙ্গভুক উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার
জলাভূমিতে পাওয়া যায়। এর পাতা খুব দ্রুত নিজের শিকারকে ফাঁদে আটকে দেয়। এটি নিজের
ভেতর থেকে এমন এক সুগন্ধ ছড়ায় যার জন্য পোকামাকোড় আকর্ষিত হয়ে গাছটির কাছে আসে
আর তখনই গাছটি তাদের শিকার করে। এই গাছের পাতার ভেতরে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া
ও এনজাইম থাকে যা এই পোকামাকোড় গুলিকে পোঁচাতে সাহায্য করে। এর ডাইজেস্টিভ এনজাইম
দশদিনের মধ্যে পোকা-মাকড় হজম করতে সাহায্য করে।
4. ড্রাগন ব্লাড গাছ
ড্রাগন ব্লাড গাছ ইয়েমেনের
উপকূলে আরব সাগরে সুকাত্রা দ্বীপের এই গাছটি দেখতে বেশ অদ্ভুত। ভৌগোলিক পরিবেশ ও বিচিত্র
ধরনের উদ্ভিদের কারণে এ দ্বীপটি ‘এলিয়েন আইল্যান্ড’ বা ‘ভিনগ্রহবাসীদের দ্বীপ’ নামে পরিচিত। হঠাৎ করে গাছগুলো দেখলে মনে হতে পারে বৃহৎ আকৃতির ব্যাঙের
ছাতা। বছরে একবার ফুল দেয়। উপযুক্ত পরিবেশে ড্রাগন ব্লাড ট্রি কয়েকশ বছর বাঁচতে পারে।
গাছের বৃদ্ধি খুবই ধীরগতিতে হয়। গাছটি প্রায় ৩২ ফুট লম্বা হয়।
–ভেষজ গুণাগুণও রয়েছে। স্থানীয় লোকজনরা সর্বরোগের চিকিৎসায় এই আঠা ব্যবহার
করে।
ধারণা করা হয়, বহুকাল আগের ড্রাগনের রক্ত থেকে এই গাছের উৎপত্তি এবং সে অনুযায়ী এর
নামকরণ!
এই গাছে ছোট কুলের মতো টকটকে লাল রঙের ফল
এ
গাছের গভীর লাল আঠালো পদার্থ থাকে , যা দেখে মনে হয় রক্ত ঝরছে
গাছের গুঁড়ি থেকে ঘন লাল
রঙের আঠা বের হয় যা বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ এবং রং তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ৬০ খ্রিস্টাব্দেও
বিভিন্ন দেশে এই আঠা রপ্তানি করা হত। মনে করা হয়, বিশ্বখ্যাত স্ট্র্যাডিভ্যারিয়াস বেহালা
রাঙাতেও তা ব্যবহার করা হত। গাছের গাঢ় লাল রস থেকেই স্থানীয়দের মুখে গাছটির নাম হয়
ড্রাগন ব্লাড ট্রি।
তবে দূষণের কারণে ক্রমেই এই
বিরল গাছের অস্তিত্ব সঙ্কটময় হয়ে উঠেছে। আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনের জেরে আর্দ্রতা
হারাচ্ছে এই অঞ্চলের বাতাস। ফলে দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে ড্রাগন ব্লাড ট্রি-রা। বিজ্ঞানীদের
আশঙ্কা, আগামী ২০৮০ সালের মধ্যে পৃথিবীর বুক থেকে চিরবিদায় নেবে প্রকৃতির অন্যতম আদিম
সন্তান।
5. কক্যাকটাস
পাতা নেই, শুধু গা-ভর্তি কাঁটা,
এমন উদ্ভিদের নাম ক্যাকটাস। ক্যাক্টাস ঘরের ভেতর টবে লাগানো হলে ১০ থেকে ৪০ বছর এবং
জমিতে আরো বেশি বছর বেঁচে থাকে পারে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ক্যাকটাসের
রয়েছে অনবদ্য ভূমিকা।
ক্যাকটাস মরুভূমির উদ্ভিদ হলেও ইনডোর প্ল্যান্ট বা ছায়াবান্ধব গাছ হিসেবে এর জনপ্রিয়তা
আছে।
Leave a Comment