ডাক্তার ... একটি মহান পেশার পেশাজীবিদের নাম ... যেখান মানুষ আসে তার অসুস্থতায় সেবা নিতে, তার শারীরিক কষ্ট দূর করতে ... কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ তার নৈতিকতা হারিয়েছে, ডাক্তাররা তাদের পেশাটাকে ব্যবসা বানিয়ে ফেলেছে। আজকাল মানুষ ডাক্তারদের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। কিছু কারন আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার, কিছু কারন অর্থনৈতিক। সচেতনতা ও মুল্যবোধ আমাদের সকল দায় থেকে মুক্তি দিতে পারে। আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যেন স্বাস্থ্য-সেবার এই সব "এন্জেল" রা যেন "ডিমন"এ পরিনত হতে না পারে। আজ বলবো এমন কিছু ডাক্তারের কথা যারা ডাক্তার রূপী ডিমন ছিল যাদের কাছে ভুলেও আপনারা কোনদিনই চিকিৎসা নিতে যাতে চাইবেন না।
১) Dr. Jayant
Patel
প্যাটেল তালিকায় একমাএ
ডাক্তার যে সিরিয়াল কিলার ছিল না, যদিও তার হাতে ৮৭ রোগী মারা যায় কিন্তু তা কোনো হিউম্যান
এক্সপেরিমেন্ট ছিল না, কোন মানসিক সমস্যা বা খুন করার অভিপ্রায়ও ছিল না। প্যাটেল এর
বিষয় ছিল তার স্থূল অযোগ্যতা এবং স্বাস্থ্যবিধি ও হাইজেনিক প্রসিডিউরের অভাব।
প্যাটেল একজন ভারতীয় ডাক্তার
কিন্তু মার্কিন প্রবাশী। তার সহকর্মীরা বলেন, তিনি অপারেশন অবহেলার সাথে করতো এবং অকারণে
অপারেশন করাতো (মানে দরকার নাই তবুও), অবহেলায় করা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অপারেশনগুলো
না করার ফলে রোগীরা গুরুতর ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হতো এবং মৃত্যু বরন করতো।
২০০৩ সালে, প্যাটেল অস্ট্রেলিয়া
চলে আসেন, যেখানে দ্রুত তার অযোগ্যতা ও বদঅভ্যাস সনাক্ত হয়ে যায়। সহকর্মীগণ তার অস্ত্রোপচারগুলোকে
বলতো "অপ্রচলিত" এবং "অযৌক্তিক" হিসাবে। নার্সরা তাদের রোগীদের
তার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতো,যখন তারা জানত তিনি হাসপাতালে ছিল। তার ডাক নাম দেয়া হয়েছিল
"ডাঃ মৃত্যু"।
পাটেল ২০০৩-২০০৫ সালের
মধ্যে ১২০২ জন রোগীর চিকিত্সা দেন তার ভিতর কনফার্ম ৮৭ জনের মৃত্যু হয় কিন্তু ২০ বছরের
কর্মজীবনে এর বাস্তব সংখ্যা একটি রহস্য। ২০১০ সালে তাকে ৩ জন রোগীর মৃত্যুর জন্য দ্বায়ী
করা হয় এবং তার ৭ বছরের জেল হয়।
২) Dr. Michael
Swango
সে ইউএস মেরিনের সাবেক
মেডিকেল অফিসার, প্রায় ৬০টি মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী করা হয় এবং এই সব মৃত্যু তাকে একজন
সিরিয়াল কিলারে পরিনত করে। যে হাসপাতালে সে কাজ করতো সে হাসপাতালের নার্সরা লক্ষ করলো
যে যেই ফ্লোরে সে দায়িত্বে থাকতো সেই ফ্লোরের সুস্থ রোগীরা অজানা কারনে খুব অসুস্থ্য
হয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। একদিন একজন নার্স তাকে এক রোগীকে আনঅথরাইজড
ইনজেকশন দিতে দেখে। এছাড়া এই জানোয়ারটা কাওকেই ছাড় দিত না, যেদিন সে তার সহকর্মীদের
জন্য চা বা কফি বানাতো সেদিন তারা কোন কারন ছাড়াই খুবই খারাপভাবে অসুস্থ্য হয়ে যেত।
পুলিশ তদন্ত করে দেখে যে সে সবাইকে বিভিন্ন ধরনের পয়জন দিত এবং তা কিভাবে কাজ করে তা
দেখার জন্য। অপরাধ প্রমানের পর তার ৫ বছরের জেল হয়।
জেল থেকে বের হবার পর সে
তার নাম চেন্জ করে আবার সেই কাজ করা শুরু করে। এখানে সে নিজের নাম রাখে Dr. Daniel
J. Adams তার লাষ্ট পেশেন্টের নামে, পুরাই সাইকো। এখানেও তার পেশেন্ট ও কলিগরা পয়জনিং
এর কারনে মারা যায় এবং ধরা পরার ভয়ে জিম্বাবুয়ে পালিয়ে যায়।
যা হোক, ২০০০ সালে সে হত্যা
অভিযোগে গ্রেফতার হয় এবং তার একবার না, তিন বার যাবৎজীবন কারাদন্ড হয়। ট্রায়াল চলা
কালে প্রসিকিউটর তার ডায়রি পড়ে শুনান যেখানে সে বর্ননা করে অপরাধের সময় কতটা আনন্দ
লাভ করতো।
৩) Dr. Marcel
Petiot
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আহত
হবার পর সে ফ্রান্সের ফিরে আসে এবং মেডিকেল কোর্স কমপ্লিট করে। তার নিজের ছিল অনেক
মানসিক সমস্যা যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে একটি সামরিক অপারেশনের সময় ধরা পরে। তা সত্যেও
সে ডাক্তার হিসাবে অনেক নাম করে। কিন্তু তার ক্লিনিককে ঘিরে ইলিগাল এবোর্শনের ও প্রয়োজনের
অতিরিক্ত ঔষধ প্রেসক্রাইবের গুজোব শোনা যেত।
তার প্রথম ভিক্টিম হিসাবে
ধরা হয় তার গার্লফ্রেন্ডকে যে ছিল তার প্রথম পেশেন্টের মেয়ে। হঠাৎ মেয়েটি একদিন গায়েব
হোয়ে যায় এবং তার প্রতিবেশীরা বলে যে তারা ডাক্তারকে একটি বড় ট্রাংক তার গাড়িতে তুলতে
দেখেছে। যা হোক পুলিশের খাতায় মেয়েটিকে ঘর থেকে পালিয়ে গেছে বলে নথিভুক্ত করা হয়।
দ্বিতীয়বার পুলিশের কাছে
অভিযোগ আসে যে তার বাসার চিমনি দিয়ে লাগাতার ধোয়া বের হচ্ছে। পুলিশ তার বাসার বেসমেন্টে
একটি কয়লার চুলা দেখতে পায় এবং পুরো বেসমেন্টে মানুষের দেহাবশেষ।
১৯৪৬ সালে তাকে মৃত্যুদন্ড
দেয়া হয়।
৪) Dr. Linda
Burfield
তাকে ডাকা হতো “Dr. Hazzard” বলে। সে কোন মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তার
ছিল না কিন্তু একজন লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রেকটিশনার ছিল। সে আবার সামান্য ঠান্ডা-জ্বর
থেকে শুরু করে ক্যান্সারের চিকিৎসা পর্যন্ত করতো। তার চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল একই, না খেয়ে
থাকা, মানে রোগীরা খেতে পারতো তবে তা হলো সারা দিনে দুইবাটি টমেটো জুস ও একটা কমলা।
এই মহিলা ধরা পরে যখন একজন প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তির বৌ মারা যায় তার ওজন ছিল ৫০ পাউন্ডেরও
কম। সে অভিযোগে তার ২ বছর জেল হয়।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর
সে একটি হাসপাতাল দেয় যার নাম ছিল “school of health”। ১৯৩৮ সালে
সে নিজের চিকিৎসা পদ্ধতি নিজের উপর এপ্লাই করতে যেয়ে মারা যায়। ধারনা করা হয় তার হাতে
১৫ জনের বেশি মৃত্যু বরন করে।
৫) Dr. Walter
Freeman
আমেরিকার ডাক্তার ও
American Psychiatric Association এর সদস্য ছিল। তিনি তালিকায় একমাএ ডাক্তার যে সরাসরি
অপরাধ করেনি, সে একটি খুব বিতর্কিত এবং আদিম চিকিত্সা পদ্ধতি ব্যবহার করতো।সেই হিসাবে ৩,৪০০ জনের ক্ষতির জন্য তাকে দায়ী করা হয়।
সে ছিল পাগলের ডাক্তার।
সে সময় ভয়ঙ্কর পাগলদেরকে নিউট্রালাইজ করার জন্য একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো যার নাম
ছিল "lobotomy"। এ পদ্ধতিতে দুটি স্টিলের শিক চোখের কোনা দিয়ে ঢুকানো হতো।
এতে পাগল ভাল হয়ে যেত না, কিন্তু পাগলের পাগলামি থেমে যেত।কিন্তু মাথার ভিতরে রক্তক্ষরনের
জন্য রোগী মারা যেত যে কারনে এই পদ্ধতিটি নিষিদ্ধ করা হয়। এবং এই ডাক্তারকেও নিষিদ্ধ করা হয়।
সব জায়গায় ভাল-মন্দ দুই
ধরনের মানুষ থাকে, এমন ডেভিল যেমন আছে, এন্জেল ডাক্তারও আছে। ভাল ডাক্তারদের অভাব নাই,
একটু সচেতন হলেই আপনি নিজেই তা বুঝতে পারবেন। মনে রাখবেন ডাক্তাররা বিধাতা নয়, তারাও
মানুষ। ভুল তাদের হয়ে যায়, কিন্তু যেসব ডাক্তাররা তাদের দায়িত্ব ভুলে যায় তাদের কোন
ছাড় নেই, তাদের প্রতিহত করতেই হবে। একজন ডাক্তারকে তার বিএমএ বা বিএমডিসি এর সার্টিফিকেট
আছে কি না বা সে দেখাতে পারবে কি না সে প্রশ্ন আপনি করতেই পারেন। আফটার অল এটা আপনার
জীবন,আপনি কাকে দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন তা আপনি প্রশ্ন করে জেনে নিতেই পারেন। সবার সুস্বাস্থ্য
কামনা করছি আল্লাহ হাফেজ
Leave a Comment