ডাক্তার ... একটি মহান পেশার পেশাজীবিদের নাম ... যেখান মানুষ আসে তার অসুস্থতায় সেবা নিতে, তার শারীরিক কষ্ট দূর করতে ... কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ তার নৈতিকতা হারিয়েছে, ডাক্তাররা তাদের পেশাটাকে ব্যবসা বানিয়ে ফেলেছে। আজকাল মানুষ ডাক্তারদের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। কিছু কারন আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার, কিছু কারন অর্থনৈতিক। সচেতনতা ও মুল্যবোধ আমাদের সকল দায় থেকে মুক্তি দিতে পারে। আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যেন স্বাস্থ্য-সেবার এই সব "এন্জেল" রা যেন "ডিমন"এ পরিনত হতে না পারে। আজ বলবো এমন কিছু ডাক্তারের কথা যারা ডাক্তার রূপী ডিমন ছিল যাদের কাছে ভুলেও আপনারা কোনদিনই চিকিৎসা নিতে যাতে চাইবেন না। পার্ট ২।

 




১) Dr. Josef Mengele

Josef Rudolf Mengele ... নামের সাথে যে ব্যক্তির ম্যান-গিলি লাগানো সে তো মানুষ গিলবেই। তাকে বলা হয় The Angel of Death 

আমার তালিকায় এই লোকটা প্রথম কারণ তিনি সর্বোচ্চ পরিমান হিউম্যান এক্সপেরিমেন্ট করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তার নিষ্ঠুরতা নাজি বাহিনীর নিষ্ঠুরতাকেও ছাড়িয়ে যায়।

ফ্র্যাঙ্কফুর্টে মেডিকেল স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর, Mengele SS এর মেডিক্যাল কোরে ভলানটিয়ার হিসাবে কাজ করা শুরু করে, পরে সেখানে সে সৈনিক হিসাবে জয়েন করে এবং ১৯৪৩ সালে তিনি ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হয় এবং মেডিকেল অফিসার হিসাবে কুখ্যাত নাত্সী কনসেনট্রেশন ক্যাম্প Auschwitz-Birkena তে যায়।

Mengele শীঘ্রই তার ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে। সে শিশুদের ব্লকের দেয়ালে মেঝে থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার উচুতে লাইন টানে। লাইনের নিচে যে সব শিশুর হাইট হতো তাদের গ্যাস চেম্বারে পাঠিয়ে দেয়া হতো। অবশিষ্ট শিশুদের হিউম্যান এক্সপেরিমেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়। সে টুইনদের ব্যপারে ছিল বিশেষ আগ্রহী। Mengele চক্ষুগোলকের মধ্যে রাসায়নিক ইনজেকশনের দ্বারা জোড়া চোখের রঙ পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। সে মানুষের পিঠে ডানা লাগানোর চেষ্ঠা করে এবং এছাড়াও মেয়েরা শক দিতেন ধর্য্য পরীক্ষা দেখার জন্য। সে মানুষের গায়ে কানকো লাগানোর চেষ্ঠা করে। এক্সপেরিমেন্ট সম্পন্ন হবার পর, সাধারণত যারা বেঁচে যেত তাদের মেরে ফেলা হতো এবং তাদের মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করা হতো।

Mengele যুদ্ধের পর জার্মানিতে ছদ্মপরিচয়ে লুকিয়ে থাকে, নির্দিষ্ট সময়ের পরে, সে দক্ষিণ আমেরিকায় পালিয়ে যায় , যেখানে তাকে ধরা হয় এবং নাৎসি যুদ্ধাপরাধী হিসাবে সারা জীবনের জন্য বন্দী করা হয়।

 

২) Dr. Shiro Ishii

Shiro Ishii ছিল একজন জাপানি মাইক্রোবায়োলোজিষ্ট। সে দ্বিতীয় সিনো-জাপানি যুদ্ধের সময় জাপানি সেনাবাহিনীর বায়োলজিকাল ওয়েলফেয়ার ইউনিটের লেফটেনেন্ট জেনারেলও ছিল।

১৯২২ সালে মেডিকেল স্কুলের স্নাতক পরে, Ishii 1st আর্মি হাসপাতাল এবং আর্মি মেডিক্যাল স্কুল টোকিও তে চাকরি করেছে, কিন্তু এটা ১৯৪২ সাল যুদ্ধের সময় জাপানি সেনাবাহিনীর জন্য গোপন প্রকল্পের অংশ হিসাবে মানুষের উপর তার বিখ্যাত পরীক্ষা শুরু করে। তার নিষ্ঠুর পরীক্ষা-নিরিক্ষার শিকার হয় অগনিত মানুষ ( আনুমানিক দশ হাজার হাজার) যারা ছিল বেসামরিক নাগরিক এদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রধানত চীনা যুদ্ধবন্দী। সে তার বন্দিদের পোকা-মাকর হিসাবেই দেখতো। পুরো ফেসিলিটির কভার স্টোরি হিসাবে এটিকে একটি করাতকলের অভ্যন্তরে তৈরি করা হয়।

তার পরীক্ষায় ছিল জৈব অস্ত্র এক্সপোজার, জীবিত অবস্থায় মানুষের দেহ ব্যহচ্ছেদ, জোরপূর্বক গর্ভপাত, কৃত্রিম স্ট্রোক, হার্ট এটাক, ফ্রস্টবিটেস এবং হাইপোথারমিয়া সহ আরও অনেক পরিক্ষা করতো।  

Ishii কে তার অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয় নি। তার এইসব পরীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার স্বাধীনতার ব্যবস্থা করে দেয়।

 

৩) Dr. Harold Shipman

হ্যারল্ড ফ্রেডেরিক শিপম্যান ছিল ব্রিটিশ ডাক্তার এবং ইতিহাসের সবচেয়ে উর্বর মস্তৃস্কের সিরিয়াল খুনীদের মধ্যে একজন। ধারনা করা হয় সে ২৫০+ রোগীর মৃত্যুর জন্য দায়ী। লিডস স্কুল অব মেডিসিন থেকে স্নাতক হওয়ার পর, ব্রিটিশ মেডিকেল কাউন্সিল এর সম্মানিত সদস্য হয়। ১৯৯৩ সালে সে নিজের ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে। তার অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রথম নজরে আসে ১৯৯৮ সালের দিকে, যখন একজন সহকর্মী চিকিত্সক তার ক্লিনিকের রোগীদের মধ্যে উচ্চ মৃত্যুর হার লক্ষ করেন। পুলিশ তদন্তে বের হয়ে আসে ডঃ শিপম্যান তার রোগীদের diamorphine overdoses দিত।বিচারে শিপম্যান কে ১৫ বছরের জেল দেয়া হয় কিন্তু ২০০৪ সালে সে আত্মহত্যা করে।

 



৪) Dr. H.H. Holmes 

ডঃ হেনরি হাওয়ার্ড হোলমস ছিল মিশিগান মেডিকেল স্কুলের একজন স্নাতক এবং প্রথম লিষ্টেড আমেরিকান সিরিয়াল খুনীদের একজন। কিন্তু যখন অধিকাংশ সিরিয়াল খুনীরা খুন করার জন্য অন্ধকার কোণ বা কানা গলি খুজে, সেখানে হোলমস শুধু খুন করার কথা চিন্তা করেই একটি হোটেলে তৈরি  করেছিল। অ্যাসিডের ফাঁদ, গ্যাসের লাইন, গোপন চিমনি এবং এমনকি বেডরুমগুলোতে যাওয়ার জন্য গোপন করিডোর ছিল। এই ঘরটি  "হাউজ অফ টেরর" খ্যাত এই হোটেলে। হোলমস তার ভিকটিম চির্বাচিত করতো প্রধানত তার মহিলা কর্মচারী ও হোটেল গেষ্টদের। নির্যাতন করে মেরে ফেলার পর সে বডিগুলোকে বেসমেন্টে নিয়ে যেয়ে নিখুত ভাবে ব্যবচ্ছেদ করতো। এবং হাড় মেডিকেল কলেজ গুলোতে বিক্রি করা হতো।

যদিও পুলিশের হিসাবে হতভাগাদের সংখ্যা হল ২৭, তবে পুলিশ এও বলেছে যে বেসমেন্টে লাশ গুলোকে এমন খারাপ ভাবে টুকরো টুকরো করে ফেলে রাখা হয়েছিল এবং অনেক লাস এতোটাই খারাপভাবে পচে যায় যে মৃতদেহ আসলে কত ছিল সেখানে তা বলা কঠিন। মিসিং রিপোর্টের ভিত্তিতে ধারনা করা হয় হোলমস 'হোটেলে প্রায় ২০০ জন এই করুন মৃত্যুবরন করে। এ নিয়ে মুভি, ডকুমেন্টারিও হয়েছে। হোলমস  এর মৃত্যু টা ছিল অনেক অনেক কষ্টের। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল ৩৫ মিনিট। খুব ধীরে ধীরে সে অবর্ননীয় কষ্ট পেয়ে মরে। প্রকৃতি তার প্রতিশোধ ভাল ভাবেই নিয়েছিল। পাক্কা হারামীর বাচ্চা ছিল। 

 

৫) Dr. John Bodkin Adams

জন অ্যাডামস ছিল একজন ব্রিটিশ ডাক্তার, তাকে প্রতারণার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং একজন সন্দেহভাজন সিরিয়াল কিলার হিসাবে মনে করা হয়। দশ বছর ধরে (১৯৪৬-১৯৫৬) সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে তার ১৬০ রোগী মারা যায় এবং সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যপার হলো, এই সব রোগীরা তাদের প্রায় সকল অর্থ বা অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ তাকে দান করে দিয়ে যায়। অ্যাডামসের মেডিকেল শাখা anesthetics ছিল, কিন্তু সে পরিশ্রমী বা দায়িত্মশীল ছিল না - শীঘ্রই তিনি তাঁর কর্মজীবনের একটি  "আইলসার ধাড়ি" হিসাবে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল। সে অপারেশনের সময় ঘুমায় যাইতো অবশ, কেক খাইতো, টাকা গুণতো এবং এমনকি এনেস্থেসিয়ার গ্যাস টিউব মিশিয়ে ফেলতো যার ফলে অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর সেন্স চলে আসতো।

এমন একটা ফালতু ডাক্তার হয়েও ১৯৫৬ সালে  এসে সে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধনবান ডাক্তার হয়ে যায়। যদিও তাকে কয়েকবার আদালতে আনা হয়েছিল কিন্তু তাকে দোষী সাব্যস্ত করা করা যায় নি, বিচারে পুলিশ তার অপরাধ প্রমাণ করতে পারিনি। কিন্তু ইংল্যান্ডের জনসাধারনের মতামত হল অ্যাডামস একজন সিরিয়াল কিলার।

 

সব জায়গায় ভাল-মন্দ দুই ধরনের মানুষ থাকে, এমন ডেভিল যেমন আছে, এন্জেল ডাক্তারও আছে। ভাল ডাক্তারদের অভাব নাই, একটু সচেতন হলেই আপনি নিজেই তা বুঝতে পারবেন। মনে রাখবেন ডাক্তাররা বিধাতা নয়, তারাও মানুষ। ভুল তাদের হয়ে যায়, কিন্তু যেসব ডাক্তাররা তাদের দায়িত্ব ভুলে যায় তাদের কোন ছাড় নেই, তাদের প্রতিহত করতেই হবে। একজন ডাক্তারকে তার বিএমএ বা বিএমডিসি এর সার্টিফিকেট আছে কি না বা সে দেখাতে পারবে কি না সে প্রশ্ন আপনি করতেই পারেন। আফটার অল এটা আপনার জীবন,আপনি কাকে দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন তা আপনি প্রশ্ন করে জেনে নিতেই পারেন। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি আল্লাহ হাফেজ

 

Leave a Comment