বিশ্বের সবচেয়ে দামী ৫টি মশলা
জাফরানের নাম যদি শুনে থাকেন, এটাও নিশ্চয়ই জানেন যে এটি
বিশ্বের সবচেয়ে দামী মশলার একটি। প্রতি আউন্স জাফরানের দাম স্বর্ণের দামের চেয়েও
বেশি। এজন্যে জাফরানের আরেক নাম "লাল স্বর্ণ।"
এরকম দামি খাবার বা খাবারের উপাদানে এমন আর কী আছে যার কারনে
এগুলোর দাম এত বেশি? সেই সব নিয়ে আজকের ব্লগ…….
১. জাফরান
জাফরানের আরেক নাম লাল স্বর্ণ
আপনার পাতের ভাত যদি হলদে রঙের আভা ছড়ায়, তাহলে বুঝতে
হবে এটির ওপর ছিটানো হয়েছিল জাফরান।জাফরান আসলে একটি ফুলের গর্ভমুন্ড। এটি মূলত খাদ্যে
ব্যবহার করা হয় রঙিন করতে।
যদি ওজনের তুলনা করেন, এটি নিঃসন্দেহে স্বর্ণের চেয়ে দামী।
কেন জাফরানের দাম এত বেশি? কারণ খুব সহজ। যে ফুল থেকে এই জাফরান সংগ্রহ করা হয়, সেটি
ফুটে মাত্র এক সপ্তাহের জন্য, শরৎকালের শুরুতে। একটি ফুলে মাত্র তিনটি গর্ভমুন্ড থাকে।
খালি হাতে এটি খুব সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করতে হয়।
এক কিলোগ্রাম জাফরান সংগ্রহ করতে অন্তত দুটি ফুটবল মাঠের
সমান জায়গায় এই ফুলের চাষ করতে হবে। বা দরকার হবে প্রায় তিন লাখ ফুল।
২. ক্যাভিয়ার
বন্য ক্যাভিয়ার এতটাই বিরল যে এর দাম এখন আরও বেড়েছে ক্যাভিয়ার
আসলে এক ধরণের সামুদ্রিক মাছের ডিম। এই ডিমকে নোনা জল এবং চাটনিতে রসিয়ে নেয়া হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবারের একটি বলে গণ্য করা হয়।
এই ক্যাভিয়ার সংগ্রহ করে প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করার কাজটি
খুবই দুরূহ। তবে তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে ক্যাভিয়ার খুবই বিরল। সবচেয়ে বিখ্যাত ক্যাভিয়ার
আসে বেলুজা স্টার্জেন মাছ থেকে। কেবল মাত্র কাস্পিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরে এই মাছ
পাওয়া যায়। কিন্তু এই মাছ এখন বিপন্ন প্রায়। খুব কম মাছের ডিমই এখন বৈধভাবে কেনা-বেচা
হয়।
একটি বেলুজা ক্যাভিয়ার পূর্ণবয়স্ক হতে সময় লাগে প্রায়
বিশ বছর। এরপরই কেবল এই মাছ ডিম পাড়তে পারে। কিন্তু এই মাছটিকে হত্যা করেই কেবল এর
ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব। অ্যালবিনো স্টার্জেন মাছের ডিম তো আরও বিরল। এটি এখন বিলুপ্তপ্রায়।
গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের হিসেবে এক কিলোগ্রাম অ্যালবিনো ক্যাভিয়ারের সর্বোচ্চ
দাম উঠেছিল ৩৪ হাজার ৫শ ডলার।
৩. ঝিনুক
ঝিনুক যত বিরল হয়ে উঠছে, এর দাম তত বাড়ছে ঝিনুক এখন বিলাসী
খাবার হিসেবে বিবেচিত হলেও আগে কিন্তু তা ছিল না।উনিশ শতকের শুরুতে ঝিনুক ছিল খুব সস্তা।
উপকূলীয় এলাকার শ্রমজীবী লোকজনের অন্যতম প্রধান খাবার ছিল এটি।কিন্তু অতিরিক্ত ঝিনুক
আহরণ এবং সমূদ্র দূষণের ফলে ঝিনুকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এবং ফলে এর দাম বেড়ে গেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় ঝিনুক।
কিন্তু লন্ডনের কোন দামী রেস্তোঁরায় এক ডজন ঝিনুক খেতে আপনাকে অন্তত ৬৫ ডলার খরচ করতে
হবে।তারপরও এর কদর কমছে না। অনেকে তো মনে করে ঝিনুকের মধ্যে আছে যৌনশক্তি বর্ধক উপাদান।
৪. সাদা ট্রাফল
এই ফাঙ্গাস বা ছত্রাক জন্মায় মাটির নীচে. সাদা ট্রাফলের বিশ্বের সবচেয়ে দুর্লভ ছত্রাকগুলোর
একটি। এটি জন্মায় মাটির নীচে।তাও আবার কেবলমাত্র উত্তর ইটালির পাইডমন্ট অঞ্চলের কিছু
গাছের শেকড়ের মধ্যে। সাদা ট্রাফলের মধ্যে আছে এক দারুণ সুগন্ধ। এবং খুবই তীব্র এক
স্বাদ।সাদা ট্রাফলের চাষ করা যায় না। এটি নিজে থেকে হয়। অনেকে এই ট্রাফলের চাষ করার
চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ কারণেই সাদা ট্রাফলের দাম এত বেশি।ম্যাকাও এর এক ক্যাসিনো
মালিক স্ট্যানলি হো একটি মাত্র সাদা ট্রাফলের জন্য ২০০৭ সালে ৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার খরচ
করেছিলেন। সেই ট্রাফলটির ওজন ছিল দেড় কেজি।মাটির নীচে জন্মানো দেড় কেজি ছত্রাকের
জন্য বেশ চড়া মূল্যই বলতে হবে।
৫. ইবেরিকো হ্যাম
এর একটি স্লাইসের জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে বহুদিন।একটা
প্রবাদই আছে। পৃথিবীতে দুধরণের হ্যাম আছে। হ্যাম, আর ইবেরিকো হ্যাম।এই বিশেষ ধরণের
শুকরের মাংস আসে কেবল মাত্র স্পেন আর পর্তুগালের একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে। যেখানে
ওক গাছের জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় কালো ইবেরিয়ান শুকর ।ওক গাছ থেকে ঝরে পড়া ফল খেয়ে
বাঁচে এই শুকর। ইবেরিয়ান হ্যাম আসে এই শুকর থেকে।
প্রায় তিন বছর ধরে এই শুকরের মাংস প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
কখনো কখনো চার বছর।গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের হিসেবে সবচেয়ে দামী ইবেরিয়ান
শুকরের একটি পা সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০ ডলার দামে বিক্রি হয়েছিল।
Leave a Comment